তানোরে অপারেটর নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বরেন্দ্র অফিস ঘেরাও"বিক্ষোভ সমাবেশ
আপডেট সময় :
২০২৫-০১-০১ ২১:০২:৩৬
তানোরে অপারেটর নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বরেন্দ্র অফিস ঘেরাও"বিক্ষোভ সমাবেশ
দেলোয়ার হোসেন সোহেল পৌর প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগে অফিস ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীসহ কৃষকরা। বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বরেন্দ্র অফিস ঘেরাও করে অফিসের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রাস্তার উপর কাঠের খড়ি ও খড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অফিসের বাউন্ডারীর মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিন করে উপজেলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখন, তানোর পৌর সভার সাবেক মেয়র ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, তানোর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক তালন্দ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান হান্নান, তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক চান্দুড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, তানোর পৌর বিএনপির আহবায়ক একরাম আলী মোল্লা, বিএনপি নেতা ফিরোজ কবির, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় বিভিন্ন এলাকার বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মিসহ শতশত কৃষক উপস্থিত ছিলেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেয়া হয়।
বক্তারা বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিলুর রহমানের নিজ বাড়ি তানোরে হওয়ায় আত্নীয়দের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিতর্কিত ও অগ্রহণ যোগ্যদের পাশাপাশি আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যে করেছেন। বক্তারা আরো বলেন, সারাদেশে যখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মতাদর্শী দোসরদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে, তখন তানোরে আওয়ামী মতাদর্শীদের পুর্নবাসন করতেই তাদের অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আ' লীগের খোলসে যারা দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর গভীর নলকূপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সাধারণ কৃষকদের শোষণ করে মোটাতাজা হয়েছে, তারাই আবার অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন।
বক্তারা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিলুর রহমানের অপসারণসহ শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি আ' লীগের আমলে যারা গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ নিয়ে কৃষকদের শোষণ করেও আবারো নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ বাতিল না করা পর্যন্ত আনন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষনা দেন। আগামী রোববার আবারো বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তানোর অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসুচীও ঘোষনা করেন বক্তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রকাশ করা তালিকায় উপজেলা আ' লীগ সভাপতির পুত্র, বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকার আ' লীগ সভাপতি ভাই ও ভাতিজাসহ বেশির ভাগই নিয়োগ পেয়েছে আ' লীগ নেতার আত্নীয় স্বজন। এর পর পরই সাধারণ কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এমনকি এদিন সন্ধ্যায় তারা বিএমডিএ চত্ত্বরে বিক্ষোভ করেন। এঘটনায় উপজেলা জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীসহ কৃষকদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শুরু হয় সমালোচনার ঝড় ও মুখরুচক নানা গুঞ্জন, জনমনেও দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অপারেটর নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে,যিনি অপারেটর নিয়োগ পাবেন তিনি কোনো অবস্থাতেই অন্যকোন ব্যক্তিকে দিয়ে নলকুপ পরিচালনা করতে পারবেন না এবং তাকে রাতে নলকুপের ঘরে অবস্থান করতে হবে।
এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই নলকুপ স্কীমে তার নিজস্ব ফসলি জমি থাকতেই হবে ইত্যাদি শর্ত দেয়া হয়েছে। অথচ আওয়ামী মতাদর্শী পরিবারের এমন নারী-পুরুষ অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন, যারা রাতে নলকুপের ঘরে অবস্থান তো পরের কথা নলকুপে যাবেই না। বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দিয়ে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে এখন তারা অন্যকে সাব অপারেটর করে নলকুপ পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী মতাদর্শী সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এছাড়াও বিএমডিএ’র পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্যর যোগসাজশে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান বিএনপির ভোটের মাঠ নষ্ট,কোন্দল সৃষ্টি ও তাদের নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কৌশলে আওয়ামী মতাদর্শীদের অপারেটর নিয়োগ করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে এভাবে অপারেটর নিয়োগ করা হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নেতার ওপর অভিমান করে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়বে। আর এমন হলে আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে প্রচন্ড সমস্যায় পড়তে হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএর ৫শ' ৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি গভীর নলকুপ রয়েছে। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অপারেটর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং গত ৩ নভেম্বর অপারেটর নিয়োগের আবেদন ফরম বিতরণ শুরু করা হয়। প্রতিটি ফরমের জন্য অফেরতযোগ্য এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।উপজেলায় গভীর নলকূপের অপারেটর পদে ১ হাজার ৫শ' ৯৬টি আবেদন বিক্রি হলেও জমা পড়ে ১ হাজার ৫শ' ৩০টি। চলতি মাসের ১৯ ডিসেম্বর, ২২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ বিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিরপেক্ষ ও শতভাগ স্বচ্ছতায় অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়োগ কমিটি নিয়োগ দিয়েছেন, এখানে তার কোনো হাত নাই বলেও জানান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স